Sunday, June 14, 2020

Death before and after

মৃত্যুর আগে ও পরেঃ

একটি জীবকে মৃত্যুর পর পুনঃ জীবিত করা হচ্ছে (৩১ঃ২৮)। এই আয়াতে ‘বায়াছা’ শব্দ এসেছে, যার অর্থ ‘পুনঃ জীবিত করা’ (আরবী অভিধান পৃষ্ঠা নং- ৭০৩)। সূরা বাকারার ৫৬ নং আয়াতে বায়াছা শব্দের অর্থ পুনঃ জীবিত করা এই অর্থ করা হয়েছে। একটি জীব মৃত্যুর পর পুনঃ জীবিত হয়ে পুনরায় আর একটি জীব দেহ প্রাপ্ত হচ্ছে। ক্রমে ক্রমে সে উন্নত জীব দেহ প্রাপ্ত হচ্ছে। এইভাবে দীর্ঘ সময় চলতে থাকবে (৬ঃ৯৮)। অর্থাৎ একটি নির্ধারিত কাল পর্যন্ত এভাবে চলবে (৬ঃ২)। একটি জীবকে আকৃতি দান করা হয় পরিশেষে তাকে উত্তম আকৃতি দান করা হয় (৪০ঃ৬৪) (৬৪ঃ৩)। অর্থাৎ ঐ জীবআত্মা মানব দেহ প্রাপ্ত হচ্ছে অতঃপর মৃত্যুর পর তাকে একই ভাবে পুনঃ জীবিত করা হচ্ছে (৬ঃ৩৬)। কারণ একটি জীবের পুনঃ জীবিত করণ প্রক্রিয়া ও একটি মানুষের পুনঃ জীবিত করণ প্রক্রিয়া একই রূপ (৩১ঃ২৮)। আর সমস্ত জীবআত্মা একই সময়ে তৈরী করা হয়েছে (৩২ঃ৪)। সৃষ্টির প্রক্রিয়াগতভাবে একটি জীবআত্মা মানব আকৃতি প্রাপ্ত হচ্ছে, ঠিক তদ্রুপভাবে একটি মানব আবার কর্মদোষে সে জীব আকৃতি প্রাপ্ত হচ্ছে (৫ঃ৬০)। আর এটা এই জন্য সম্ভব হচ্ছে যে, একটি জীবের সৃষ্টি ও একটি মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া একই রকম (৩১ঃ২৮) এই ভাবে একটি জীবআত্মা জন্ম-মৃত্যুর মাধ্যমে জন্ম-জন্মান্তরে চলমান থেকে নিম্ন থেকে উন্নত আকৃতির দিকে চলবে আবার মানব আকৃতি প্রাপ্তির পরে কর্মদোষে সে নিম্ন আকৃতি প্রাপ্ত হবে এই মর্মে আল্লাহ বলেন “তোমাকে উত্তম আকৃতি দান করি (৯৫ঃ৪) আবার নিম্নস্তরে নামাইয়া দেওয়া হবে (৯৫ঃ৫)। এইভাবে চলবে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত। একটি মানুষকে হাশরের দিন প্রভুর সম্মুখীন হতে হবে (২২ঃ৭)। তখন সকল জীবই প্রভুর কাছে একত্রিত হবে (৬ঃ৩৮)। আকাশ ও পৃথিবী তৈয়ার করার সময় এই দুইয়ের মধ্যস্থিত সমুদয় কিছুই তৈয়ার করা হয়েছে (৩২ঃ৪)। এই আয়াত অনুসারে জীব জগতও তখনই তৈয়ার করা হয়েছে। আর ঠিক তখনই মানুষও তৈরি করা হয়েছে এটাও নিশ্চিত। একটি জীব যখন পানি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে (২৪ঃ৪৫) আবার একটি মানুষকেও পানি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। (২৫ঃ৫৪)। ঠিক একটি মানুষের যেমন আল্লাহ বুদ্ধি দিয়েছে, ঠিক একটি জীবকে তথা পশু-পাখিকেও বুদ্ধি দিয়েছেন (২৭ঃ২২)। মানুষের যেমন ভাষা আছে, তেমনই জীবেরও ভাষা আছে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য (২৭ঃ১৬)। আবার বনি আদমের বংশধরকে সৃষ্টি করে আকৃতি দান করে (৭ঃ১১)। অতঃপর তাদের কাছথেকে স্বীকারউক্তি নিয়েছিল (৭ঃ১৭২) আর সেই স্বীকারোক্তি নেওয়ার পর থেকেই এই আত্মাগুলি জীব জগত হিসাবে পৃথিবীতে চলমান আছে। যেহেতু একটি জীবের সৃষ্টি প্রক্রিয়া ও মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া একই রকম (৩১ঃ২৮)। আর তাই বলা যায় যে, এক একটি মানুষ এক একটি জীব থেকে তৈরি করা হয়েছে (৬ঃ৯৮) (৭ঃ১৮৯) (৩৯ঃ৬)। অর্থাৎ মানবআত্মার আদি অবস্থান ছিল জীবআত্মা। যেখানে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল। জীবআত্মা তথা মানবাত্মাগুলিকে প্রথমে পানি দিয়ে সৃষ্টি করে কতককে বুকে ভর দিয়ে চলার আকৃতি দান করে, আবার কতককে দুই পায়ে চলার আকৃতি দান করে, আবার কতককে চার পায়ে চলার আকৃতি দান করে (২৪ঃ৪৫)। এইভাবে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয় (৬ঃ৯৮)। অতঃপর এই আত্মাগুলি উত্তম আকৃতি তথা মানব আকৃতি প্রাপ্ত হয়। আর তখনই তাদের পরিচয় হয় মানব বলে। তার আগে তারা জীব আত্মা বা জীবজগত হিসেবে পরিচিত ছিল। আসলে ভূ-পৃষ্ঠের সকল জীবই মানব আত্মার সুপ্ত অবস্থা। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল সকল জীবই মানুষের উপমা’ (৬ঃ৩৮)। আর তাই বলা যায় যে, এক একটি মানুষ এক একটি জীব থেকে তৈরি করা হয়েছে (৬ঃ৯৮) (৭ঃ১৮৯) (৩৯ঃ৬)। তাহলে দেখা যায় জীবআত্মা জন্ম জন্মান্তরে দীর্ঘ কষ্টের পরে মানব আকৃতি প্রাপ্ত হয়। এই মর্মে আল্লাহ বলেন ‘মানুষকে অতি কষ্টের মাধ্যমে'তৈরি করা হয়েছে’ (৯০ঃ৪) আর একটি জীবআত্মা যখন মানব আকৃতি প্রাপ্ত হয়, তখন তার দেহ মানব আকৃতি হলেও কিন্তু তার স্বভাব থাকে জীবের মতই (৭ঃ১৭৯) (৮ঃ২২)। আর তাই আল্লাহ এদের কাছে রসূল পাঠায় এদের সংশোধন করার জন্য (৭ঃ৩৫)। যেন তারা রসূলের মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করতে পারে (২ঃ১৫১)। তখন যারা ঈমান আনে এবং সৎ কর্ম করে তখন তারা উন্নত জীবন লাভ করে, ফলে ওদের মৃত্যুর পর পুনঃ জীবিত করে মানুষের মাঝে চলার জন্য তাদের জ্ঞানের আলো দান করা হয় (৬ঃ১২২)। তখন তাদের পূর্বের আকৃতির স্থলে তাদের পূর্বের আকৃতি সাদৃশ্য আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয় (৫৬ঃ৬১)। অর্থাৎ তারা পূর্বের ন্যায় মানব আকৃতিই প্রাপ্ত হয় কিন্ত অন্য চেহারায়। এইভাবে তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদেরকে মর্যাদা দান করা হয় (৪৬ঃ১৯)। এইভাবে তাদেরকে উত্তম আকৃতি দান করা হয় (৯৫ঃ৪) আর যারা মানব আকৃতি পাওয়ার পরও রসূলকে বিশ্বাস করল না। ফলে উহাদের প্রতি লানত হল, এবং আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রোধাম্বিত হইল, ফলে উহাদেরকে বানর ও শুকর করা হবে (৫ঃ৬০) (২ঃ৬৫) (৭ঃ১৬৬)। তাহলে দেখা গেল হারাম কর্ম করার ফলে একজনকে মানব স্তর থেকে নিম্ন স্তরে অর্থাৎ বানর ও শুকর স্তরে নামাইয়া দেওয়া হয়। আবার একটি জীব মানব স্তর লাভ করতে পারে এইজন্য যে, একটি জীবের সৃষ্টি প্রক্রিয়া একটি মানব সৃষ্টি প্রক্রিয়ারই অনুরূপ (৩১ঃ২৮)। একই ভাবে একটি জীব থেকে যখন একটি মানব তৈরি তখন একটি মানবাত্মা কর্মদোষে জীবদেহে যেতে পারে। এইজন্য যে, আল্লাহ আদিতে জীব সৃষ্টি করেন অতঃপর বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটান এবং উহাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবন উপকরণ দান করেন (২৭ঃ৬৪)। কারণ যারা প্রথম বার ঈমান অর্জন করে নাই, পুনরায় তাদের অবস্থার পরিবর্তন করিয়া পুনর্বার পূর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে দিবে (৬ঃ১১০)। অর্থাৎ প্রথম বারের মত তাকে সৃষ্টি করে ফিরিয়ে আনা হবে (৭ঃ২৯)।  আর এইগুলি আল্লাহর জন্য সহজ এই জন্য যে, তিনি যখন যথাবিধি কিছু সৃষ্টিকালে হও বলে আর তখনই উহা হইয়া যায় (৬ঃ৭৩)। আর এটা সত্য যে, তিনি মৃত্যু ঘটান আর মৃত্যকে জীবিত করেন (৬ঃ৯৫)। তিনি ত মৃত কে জীবিত কালে লিখিয়া রাখেন যাহা উহার অগ্রে প্রেরণ করে এবং যাহা উহার পশ্চাতে রাখিয়া যায় (৩৬ঃ১২)। এইভাবে তাকে দুই বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হয় যাতে সে ধৈর্য্য ও ভাল কর্মের দ্বারা তার মন্দ কর্মকে মোকাবেলা করতে পারে (২৮ঃ৫৪)। এই লক্ষে জীবন থেকে মৃত্যু আর মৃত্যু থেকে জীবিত আবার মৃত্যু ঘটাবেন, আবার পুনরায় জীবন্ত করিবেন, পরিশেষে প্রভুর দিকে ফিরিয়ে আনা হবে (২ঃ২৮)। এইভাবে দুই বার বা ততোধিক বার মৃত্যু ততোধিক বার জীবন দেওয়া হবে (৪০ঃ১১)। এইভাবে তিনি প্রথমে সৃষ্টিকে অস্থিত্বে আনেন পরি পুনরাবর্তন ঘটান (১০ঃ৪) (৮৫ঃ১৩)। এইভাবে আল্লাহ আদিতে সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তিনি উহার পুনরাবৃত্তি ঘটান, অতঃপর তাকে প্রভুর নিকট প্রত্যানিত করেন (৩০ঃ১১)। আর জন্ম মৃত্যুর এই পদ্ধতির বাইরে যাওয়া কারো কোন সুযোগ নেই (৬ঃ৯৫)। আর এই সকল আল্লাহর জন্য খুবই সহজ (৩০ঃ২৭)। তাহলে দেখা গেল সকল জীবআত্মাই মানবাত্মা এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে বনি আদমের পরবর্র্তী বংশধর তথা জীবআত্মাগুলিকে সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়েছিল (৭ঃ১৭২)। আর তাই সেই থেকেই জীবআত্মা তথা মানব আত্মাগুলি জন্ম-জন্তান্তরে দেহ থেকে দেহান্তরে চলমান থাকিয়া বর্তমান মানব জনম পর্যন্ত আসিয়াছে বিধায় এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে, জন্মের পূর্বে মানুষ কোন না কোন জীবদেহে ছিল যেটাকে বর্তমান জনম থেকে আড়াল করা হয়েছে। (২৩ঃ১০০)। এই আয়াতে বরযখ শব্দ এসেছে, তার অর্থ আড়াল বা প্রতিবন্ধকতা। (আঃ অভিঃ পৃ. নং-৬৭১) এখানে উল্লেখ্য যে, জীব জগতটা সমস্তই মানব আত্মার বিচরণ এই জন্য যে, হায়ান এর আত্মা বলে কোন আত্মা তৈয়ার করা হয় নাই। কারণ হায়ান শব্দের অর্থ হচ্ছে জানোয়ার বা জন্তু (আরবী অভিধান পৃ. নং-১২২৬) সেক্ষেত্রে কোরআনে যখন হায়ানের আত্মা সৃষ্টি সম্পর্কে কোন আয়াত নেই, তাহলে সকল জীবআত্মাই মানবাত্মা এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই বলা যায় যে, মানুষ জন্মের আগে অন্য কোন না কোন মানব দেহে বা অন্য কোন জীব দেহে ছিল, আর তাই বনি আদমদের পরবর্তী সন্তানদের স্বীকারোক্তি নেওয়ার পর থেকে সেই আত্মাগুলি জীব জগত হিসেবে বিচরণ করে আসছে। পরিশেষে মানব দেহে এসে প্রকাশ হচ্ছে মানব রূপে। আবার কর্মদোষে কেহবা নিন্মগামী হচ্ছে বা জীবজগতে চলে যাচ্ছে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, মানবকে উক্তম আকৃতি দান করি (৯৫ঃ৪) আবার তাকে নিম্নস্তরে বা হীনতাগ্রস্থদের হীনতায় পরিণত করি (৯৫ঃ৫)। এই আয়াতে প্রমাণ হয় উত্তম ও অধম সবই মানব আত্মা। যার ফলে কর্মদোষে কেউ বা অন্ধ কেউবা বোবা, কেউবা ন্যাংড়া, কেউবা অপূর্ণাঙ্গ, কেউবা হত দরিদ্র, কেউবা পূর্ণাঙ্গ, কেউবা ধনী, কেউবা অসুখী, কেউবা সুখী এই সবই হচ্ছে তার পূর্ব জনমের কর্মের ফলে। কারণ পৃথিবীতে মানুষের যত অকল্যাণ হয় তা তার নিজ কর্মদোষে হয়ে থাকে (৪ঃ৭৯)। কারণ আল্লাহ কাহারো উপর জুলুম করেন না (১৮ঃ৪৯) (১৬ঃ৩৩)্। অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে, মাটি দিয়ে মানুষকে তৈরি করা হয়েছে (৩৮ঃ৭১) কিন্তু জীব আত্মাকে পানি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে (২৪ঃ৪৫)। মাটি দিয়ে মানুষের দেহ তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু আত্মাতো মাটি দিয়ে তৈরি নহে, কারণ সকল আত্মাই একই উপাদানে তৈরী, সেটা হচ্ছে পানি (২৪ঃ৪৫)। আর তাই বলা হয়েছে মানুষকে পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে (২৫ঃ৫৪)। মানব দেহ তৈরি সূত্রপাত মাটি দিয়ে, পরিশেষে কিন্ত তা তরল পদার্থের নির্যাস থেকে তৈরির কথা বলা হয়েছে (৩২ঃ৮)। এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ সৃষ্টি জগতে তিনটি সম্প্রদায়ে সৃষ্টি করেছে। ফেরেস্তা, জ্বীন ও জীবআত্মা তথা মানবাত্মা। ফেরেস্তার আত্মা নূর থেকে, আর জ্বীনদের আত্মা আগুন থেকে তৈরী (৭ঃ১২) আর জীব আত্মা পানি দিয়ে তৈরী (২৪ঃ৪৫)্ জীবআত্মা তথা মানবাত্মা পানি দিয়ে তৈরী (২৫ঃ৫৪)। তবে এই জীবআত্মা বা মানবআত্মাই হচ্ছে একটি জাতি বা সম্প্রদায়। কিন্তু এর অনেকগুলি প্রজাতি আছে, যেমন আনআম (গরু, ছাগল, মহিষ, হরিণ ইত্যাদি) একটি প্রজাতি, বানর শুকর এরাও প্রজাতি, বিহঙ্গকুল যাহা উড্ডীয়মান এরাও একটি প্রজাতি, তবে সবাই জীবআত্মা, এদের সবারই শেষ বা চূড়ান্ত বিকাশ হচ্ছে মানব রূপে। আর তাই সকল জীবআত্মাকে প্রভুর দিকে একত্রিত করা হবে (৬ঃ৩৮) (৩৮ঃ১৯)। অর্থাৎ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেহ নেই যে, দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে বা তথা মানব রূপে উপস্থিত হবে না (১৯ঃ৯৩)। আর এই জন্য প্রত্যেক জীবকেই তার ইবাদত পদ্ধতি দেওয়া হয়েছে (২৪ঃ৪১)। শেষ বিচারের পরে সকল জীবআত্মা মানব রূপে স্তানান্তারিত হবে বিধায় বলা হয়েছে, জ্বীন ও মানবকে দিয়েই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করিব (৩২ঃ১৩)। এখানে কিন্তু অন্যান্য জীবের কথা বলা হয় নাই, কারণ অন্যান্য জীবগুলি মানবরূপে স্থানান্তরিত হয়েছে। এই জন্য বলা হয়েছে, আমি জ্বীন ও মানুষের মধ্য থেকে রসূল পাঠিয়েছি (৬ঃ১৩০) এবং অধিকাংশ জ্বীন ও মানবকেই জাহান্নামে দেওয়া হচ্ছে (৭ঃ১৭৯)। এখানে কিন্তু জীবআত্মাদের আলাদা ভাবে দেখানো হয় নাই। এতে প্রমাণিত হয় যে, সেদিন সকল জীবআত্মাই মানব দেহে স্থানান্তরিত করেই তাদের শাস্তিতে আনা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সমস্ত আত্মাই একই সময়ে তৈরী (৩২ঃ৪) এবং এই সকল কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণে (৫৪ঃ৪৯)। আর সকল কিছু একই সময়ে ধ্বংশ হবে (২৮ঃ৮৮)। এই দুইয়ের মাঝখানে কোন ধ্বংশ নেই, রূপান্তর হচ্ছে মাত্র। তাই বস্তুর অবিনাশিতাবাদ সূত্রে বিজ্ঞান এটাই প্রমাণ করেছে যে, বস্তুর কোন ধ্বংশ নেই, রূপান্তর হয় মাত্র। আর তাই জীবআত্মা ধ্বংশ হচ্ছে না, বরং মৃত্যুর মাধ্যমে এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তর হচ্ছে মাত্র। তাই বলা হয়েছে প্রত্যেক জীবের মৃত্যু হবে (২৯ঃ৫৭) (২১ঃ৩৫)। এই সকল আয়াতে কিন্তু ধ্বংশ শব্দ আসে নাই। কারণ ধ্বংশ শব্দের আরবী হচ্ছে হালীকু (আরবী অভিধান পৃ. নং-২৬৩৩) যাহা সূরা কাছাস ৮৮ নং আয়াতে এসেছে, হালীকু অর্থ ধ্বংশ। আর মৃত্যু শব্দের অর্থ হচ্ছে জীবআত্মা থেকে পরমাত্মা তথা রূহুকে বিচ্ছিন্ন করা। যেমন নিদ্রাটাও এক ধরনের মৃত্যু। যখন জীবআত্মা থেকে রূহুকে বিচ্ছিন্ন করা হয় (৩৯ঃ৪২)। আর এখানে নিদ্রার সময় জীবআত্মাটাকে দেহ থেকে বাহির করা হয় আর রূহু দেহের ভিতরে অবস্থান করে (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আল-কুরআনুল কারীম টিকা নং-১৫০১) আর তাই মানব দেহ সৃষ্টির পূর্বেই মানব আত্মা তৈরি করা হয়েছে (৩২ঃ৪)। আর সেইগুলি জীবআত্মা হিসাবে বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভক্ত করে পৃথিবীতে বিচরণশীল রাখা হয়েছে। আর যখন কোন প্রজাতি তৈরির ইচ্ছা করেন আর তখনই আল্লাহ শুধু তার দেহটা মাটি অথবা পানি দিয়ে তৈরি করে তাতে জীবআত্মা তথা মানব আত্মাকে সংযোজন করে অতঃপর নিজ রুহু ফুৎকার করে প্রজাতির প্রবর্তন করেছে। সেই দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয় যে, সমস্ত বনি আদম সন্তানকে একই সময়ে সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিল, এবং সবাই স্বীকার করল যে, আপনি আমাদের প্রভু (৭ঃ১৭২) আর সেই থেকে এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে পরে মানব দেহ প্রাপ্ত হচ্ছে। উপরোক্ত আলোচনায় সেটাই কোরআন থেকে প্রমাণিত হয়েছে। আর এই কোরআনে দ্বীনের বিষয়ে কোন দর্শন বাদ দেওয়া হয় নাই (৬ঃ৩৮)। আল্লাহত মানুষের জন্য এই কোরআনে সর্ব প্রকার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন (৩০ঃ৫৮)। আর নবী (সঃ) কে তো এই কোরআনের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে (৬ঃ৫০)। এই জন্য নবী (সঃ) এর জন্য বিধান স্বরূপ এই কোরআনই (২৮ঃ৮৫)। এই জন্য বলা হয়েছে, এই কোরআন মোতাবেক যারা বিধান দেয় না তারা য়ালিম, ফাসেক ও কাফির (৫ঃ৪৪) (৫ঃ৪৫) (৫ঃ৪৭)। কবর সম্পর্কে এক শ্রেণীর মানুষের ধর্মীয় দর্শনে বলে, কবরে তিনটি প্রশ্ন করে ঈমান পরীক্ষা করা হবে এ কথাটি ঠিক নহে বরং রোজ কিয়ামতের দিন ২য় সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর দেহে আত্মা সংযোজন করা হবে (৮১ঃ৭)। এতে প্রমাণ হয় কবরে জীবিত করে তিনটি প্রশ্ন করে ঈমান পরীক্ষা করা হবে এই কথার কোন ভিত্তি নেই। তারপরও অনেকেই হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে ঃ (ক) তোমার প্রভূ কে? (খ) তোমার দ্বীন কী? (গ) নবী (সঃ) কে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, এই ব্যক্তি কে? কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এই তিনটি প্রশ্ন করে কবরে ঈমান পরীক্ষা করা হবে মর্মে কোন আয়াত পবিত্র কুরআনে নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর পরের জগতটা গায়েব জগত। আর গায়েব জগতের খবর একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। (সূরা নামল ৬৫) আর নবী (সঃ) ও গায়েব জানেন না। (৬ঃ৫০) (৭ঃ১৮৮)। আর নবী (সঃ) ওহী ব্যতিত কাউকে সতর্ক করেন নাই। (আম্বিয়া ৪৫)। আর নবী (সঃ) এর প্রতি নাযিলকৃত সকল ওহী এই কুরআনের মধ্যে এবং পবিত্র এই কুরআনের মধ্যে ওহী ব্যতীত কোন কথা নেই। আর নবী (সা.)কে এই কোরানই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে (৬ঃ৫০)। আর নবী (সা.)-এর জন্য এই কোরানই বিধান হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে (২৮ঃ৮৫)। যেহেতু কবরে উক্ত তিনটি প্রশ্নের মাধ্যমে মানুষের ঈমান করার মাধ্যমে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে মর্মে পবিত্র কুরআনে কোন আয়াত নাই বিধায় কবর সম্পর্কে তাদের এহেন ধর্মবোধ ভিত্তীহীন। যারা কবরের বিষয়ে পবিত্র কুরআন মোতাবেক বিধান দেয় না। আর যারা দ্বীন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মোতাবেক বিধান দেয়না উহারা জালিম, ফাসেক ও কাফের (৫ঃ৪৪) (৫ঃ৪৫) (৫ঃ৪৭)। বিধায় তাদের ধর্মীয় দর্শন কুরআন পরিপন্থী। এখানে উল্লেখ্য যে, কবরের আযাব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কোন আয়াতে উল্লেখ নেই। বরং উল্লেখ আসছে, ২য় শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর যখন কবর থেকে উঠে প্রভুর দিকে যাবে তখন তারা বলবে, কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উঠাইল (৩৬ঃ৫১) (৩৬ঃ৫২)। যেমনভাবে নিভৃত ছিল গুহায় কাহফ ও তার সঙ্গীরা (১৮ঃ১১) (১৮ঃ২০)। ঠিক কবরও একটি নিক্রিয়, নির্জীব, ঘুমন্ত অবস্থার মত। এতে প্রমাণ হয় যে, কবরে কোন আযাব হচ্ছেনা, যদি কবরে আযাব হতো তাহলে তারা বলত আমাদেরকে আযাব থেকে কে উঠাইল? তারপরও যদি কেহ বলে সকল অপরাধীদের জন্য কবরে আযাব হবে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, ধরুন প্রথম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর একজন ব্যক্তির মৃত্যু হইল (সূরা জুমার৬৮) তার পর দ্বিতীয় সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার আগ পর্যন্ত নির্জীব কবরস্থ রহিল। দ্বিতীয় সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর সে দন্ডায়মান হইল (সূরা জুমার৬৮) এবং কবর থেকে উঠে সকলে প্রভুর দিকে দৌড়াতে থাকিবে (ইয়াছিন-৫১) তার পর শেষ বিচার শুরু হবে। এই বর্ণনা মোতাবেক রোজ কেয়ামতের পূর্ব মুহুর্তে যারা মারা গেল তাদের ত কবরে কোন আযাবের বর্ণনা আসেনি। (সূরা জুমার৬৮ )নং আয়াত অনুসারে ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়া এবং ২য় সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এই সময়টা নির্জীব কবর এখানে কোন আযাব নেই। কারণ নির্জীব অবস্থায় আযাব এবং শান্তি কোনটাই সম্ভব নহে। এতে প্রমাণ হয় কবরে কোন আযাব নেই। ১ম সৃষ্টির পর হইতে ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত মৃত্যু হবে সেই মৃত্যুর পরে পুনরুজ্জীবিত করে প্রভুর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। (৬ঃ৩৬)। তখন তার সম্মুখ থেকে সকল পর্দা উন্মোচিত করা হবে এবং তার দৃষ্টি প্রখর করা হবে (সূরা-কাফ, আয়াত-২২) তখন প্রভুর দিকে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে (সূরা কিয়াম, আয়াত-২৩)। সেদিন কাফিররাও স্পষ্টবাবে আল্লাহকে দেখতে পাবে। (১৯ঃ৩৮)। তখন বলা হবে মৃত্যুর পূর্বে তোমরা যা কিছু কামনা করতে আজ সব দেখলেতো? (৩ঃ১৪৩) তখন তারা বলবে আমরা সব দেখলাম এবং শুনলাম এবং প্রভুকে বিশ্বাসও করলাম (৩২ঃ১২)। তখন বলা হবে তোমাদের আজকের বিশ্বাস কবুল করা হবে না (৩২ঃ২৯)। তবে যারা পূর্ব থেকে বিশ্বাসী ছিল তাদের বিশ্বাস কবুল করা হবে (৬ঃ১৫৮)। তখন তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি প্রদর্শন করবে। (নহল-১১১)। এবং বলবে হে প্রভু আমরাতো পূর্ব থেকেই বিশ্বাসী ছিলাম (৩২ঃ১২)। তখন বলা হবে, তোমরা বিশ্বাসী ছিলে বললেই তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না ইমান পরীক্ষা না করে। (আনকাবুত-২)। শুধু ইমান পরীক্ষা করা হবে না, বরং ইমান অনুসারে পূর্ব কর্ম পরীক্ষা করা হবে (১০ঃ৩০)। আর এমন একটি কঠিন পরীক্ষা করা হবে, যে পরীক্ষায় কারা প্রকৃতপক্ষে ইবলিসের অনুসারী ছিল, তারা ধরা পড়বে। (৬৮ঃ৬) সেই পরীক্ষাটি হবে এমন একটি কঠিন পরীক্ষা যে সেথায় শুধু যালিমরাই আক্রান্ত হবে না বরং নামধারী, লেবাসধারী মমিনরাও আক্রান্ত হবে। (৮ঃ২৫)। আর সেই পরীক্ষাটা হবে এই ভাবে যে, আল্লাহ পাক মানব আকৃতিতে উপস্থিত হবেন এবং সাক্ষাত দিবেন। "তখন আল্লাহর পা উন্মোচন করা হবে এবং সেজদা দিতে বলা হবে। তারা সক্ষম হবে না" (কালাম-৪২)। কারণ তারা দুনিয়াতে তাদেরকে এই সেজদা করতে আহবান করা হয়েছিল, তারা করে নাই (কালাম-৪৩)। এইভাবে সেখানে তার ঈমান পরীক্ষা করা হবে। (২৯ঃ২)। কর্মফল অনুসারে তার প্রতিদান প্রদান করা হবে। (সূরা হুদ-১১১)। এইলক্ষে তাকে পুনরায় সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হবে। ১ম বার যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। অর্থাৎ যেভাবে প্রথমে সৃষ্টি করিয়াছেন তোমরা সেইভাবে ফিরিয়া আসিবে (৭ঃ২৯)।  এইভাবে জীব জগত পর্যায়ক্রমে আবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টিতে এনে পুনরাবর্তন ঘটানো হচ্ছে। (সূরা ইউনুস-৪) (২৭ঃ৬৪) (৮৫ঃ১৩)। এই ভাবে জন্ম-মৃত্যু-কবরস্থ-পুনরুজ্জীবিত-প্রভুর কাছে প্রত্যানিত-পরে ইমান পরীক্ষার পরে পুনরাবর্তন (৮৫ঃ১৩)। এইভাবে চলবে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ এই জনমে যে কর্ম মানুষ করছে, পরবর্তী জনমে তা ভোগ করছে। কারণ মানুষের যত অকল্যাণ হয় তা তার নিজ কর্মের কারণে (৪ঃ৭৯)। এইভাবে জন্ম জন্মান্তরে মানুষ শাস্তি বা শান্তির মাধ্যমে পরে মহাশাস্তি/শান্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমাকে দুইবার শাস্তি দিব পরে মহাশাস্তির দিকে (৯ঃ১০১)। আবার তোমাকে দুইবার মৃত্যু এবং দুইবার জীবন দান করা হবে।(৪০ঃ১১, ২ঃ২৮)। অর্থাৎ কমপক্ষে দুই বার মৃত্যু দুইবার জীবন। (সুরা মমিন-১১)। ১ম মৃত্যুর পর নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে। (সুরা নং-৩৪ সাবা, আয়াত নং-৭)। এবং পুনরায় সৃষ্টি করা হবে ১ম বারের মত। (সুরা আরাফ-২৯)। কমপক্ষে দুইবার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। (সুরা কাসাস-৫৪)। এইজন্য সৃষ্টিতে এনে পুনরাবর্তন ঘটানো হবে। (সুরা ইউনুস-৪) (৮৬ঃ১৩)। আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্থিত্ব দান করেন অতঃপর পুনরায় সৃষ্টি করেন (২৯ঃ১৯) (৩০ঃ২৭)। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক নফসের মৃত্যু হবে (সূরা আনকাবুত-৫৭)। আর এই কারণে পৃথিবীর কোন কিছুই নিরর্থক সৃষ্টি করে নাই (৩৮ঃ২৭)। মৃত্যুর পূর্বে জীবন ছিল এটা নিশ্চিত। অর্থাৎ আগে জীবন পরে মৃত্যু। সেক্ষেত্রে সুরা বাকারার ২৮ নং আয়াতের বিষয়টি মৃত্যু থেকে জীবিত কথা দিয়ে প্রমাণ হয় আগে জীবন ছিল। সুরা বাকারার ২৮ নং আয়াতটির বর্ণনায় এমন হয় যে, (জীবন থেকে) মৃত্যু পরে জীবিত আবার মৃত্যু আবার জীবিত এবং পরিশেষে প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন। এখানে উল্লেখ্য যে দুইবার কথার মধ্যে একাধিকবার কথাটা এসে যায়, সেক্ষেত্রে জন্ম জন্মান্তরে একাধিকবার জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে রোজ কিয়ামতের পূর্ব মুহুর্তে ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পরে মৃত্যু। এই যুক্তি অনুসারে সূরা জুমার ৬৮ নং আয়াতে মৃত্যুর পূর্বে আর একটি মৃত্যু ছিল। জন্মান্তর বাদে বিশ্বাসী না হলে সূরা জুমার ৬৮ নং আয়াতে উল্লেখিত ১ম সিংগায় ফুক দেওয়ার মৃত্যুর পরে ২য় সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর জীবিত হয়ে প্রভুর কাছে দন্ডায়মান এই যুক্তিতে দুইবার মৃত্যু প্রমাণিত হয় না। যদি কেহ জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী না হয় সেক্ষেত্রে সূরা মমিনের ১১ আয়াতে দুইবার মৃত্যু কথাটির সাথে সুরা জুমার ৬৮ নং আয়াতটি পরস্পর বিরোধী হয়। যেহেতু কুরআনের কোন আয়াত পরস্পর বিরোধী নয় বিধায় সেহেতু ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পুর্বে বার বার জন্ম-জন্মান্তরবাদ এটা নিশ্চিত। কারণ ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পুর্বে যাদের মৃত্যু হবে কাফেররা তখন বলবে, আমাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দাও (২৩ঃ৯৯)। তাদের উদ্দেশ্যে বলা হল 'ইহা হইবার নয়' বরং পরবর্তী পুনরুজ্জীবিত হওয়া পর্যন্ত তোমাদের সামনে বরযখ থাকবে। (২৩ঃ১০০)। এখানে উল্লেখ্য যে, ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পুর্বে মৃত্যুর পর ইমান পরীক্ষার পরে যদি কবরে রাখা হইত বা কবরে আত্মা ফেরত পাঠানো হইত তাহলে আয়াতে পুনরুজ্জীবিত হওয়া পর্যন্ত তোমাদের সামনে বরযখ থাকবে কথা না বলে তোমরা কবরে থাকবে কথা বলা হতো। যেহেতু উক্ত আয়াতে কবর কথা আসে নাইএতে প্রমান হয় যে, মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করে প্রভুর কাছে নিয়ে ইমান পরীক্ষার পর তাকে আর কবরে পাঠানো হয় না। এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ সকল আত্মা একই সময় সৃষ্টি করে সকলের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিলেন (আরাফ-১৭২)। ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে (জুমার-৬৮)। তখন সকল কিছু একই সাথে ধ্বংস করা হবে (সুরা কাসাস-৮৮)। একই সময়ে ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার মাধ্যমে সকলের মৃত্যু হবে (জুমার-৬৮)। তারপর সকলকে একই সাথে মৃত্যুর পর কবরস্থ করা হবে (৮০ঃ২১)। এখানে উল্লেখ যে কিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে কাউকে জীবিত করা হচ্ছে না। একমাত্র ২য় সিংহে ফুতকার দিলেই করব থেকে দন্ডায়মান হবে (৩৬ঃ৫১)। এতে প্রমাণ হয় যে কবর একটি নির্জীব অবস্থা কারণ তখন তারা বলবে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উঠাইল (৩৬ঃ৫২) এবং আল্লাহ যতদিন ইচ্ছা করবেন ততদিন তারা কবরস্থ থাকবে। (আবাসা-২১)। তারপর আল্লাহ ২য় সিংগায় ফুক দেবেন (জুমার-৬৮)। তারপর তাদের পূর্বের দেহে আত্মা সংযোজন করা হবে (তাকবীর-৭) (আবাসা-২২)। তারপর তারা কবর থেকে উঠে প্রভুর দিকে ধাবিত হবে হাশরের মাঠে (৩৬ঃ৫১)। তাহলে দেখা গেল ১ম সৃষ্টি থেকে শুরু করে ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার মাধ্যমে সকল কিছু ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত বার বার জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে রূপান্তর। এই পিরিয়ডটাই জন্মান্তরবাদ। অর্থাৎ ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পূর্বে যে সকল মৃত্যু হচ্ছে সেই মৃত্যুর পর দেহগুলি কবরস্থ করা হচ্ছে (৮০ঃ২১) (৯ঃ৮৪)। আর কবরে দেহগুলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আত্মাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে জতিষ্ময় দেহে প্রভুর কাছে প্রত্যানিত করা হবে (৬ঃ৩৬)। অতঃপর তাকে সেখানে ইমান পরীক্ষা করা হবে (২৯ঃ২)। এই লক্ষে তাকে পুনরায় সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হবে প্রথম বার যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল (৭ঃ২৯)। (১) এই লক্ষে তাকে নতুনভাবে দেহ তৈরী বা সৃষ্টি করা হবে (সাবা-৭)। তাকে নতুন আকৃতি দান করা হবে (ওয়াকিয়া-৬১) তবে এক জন্ম থেকে অন্য জনমের মধ্যে একটি অন্তরাল থাকে (মমিন-১০০)। যাতে করে সে পূর্ব জনমের কোন স্মৃতি স্মরণ করতে না পারে পরবর্তী নতুন জীবনে তাকে পূর্ব জীবনের কর্ম অনুসারে শাস্তি বা শান্তি দেওয়া হবে আর পূর্ব জনমের মৃত দেহটা কবরে মাটির সাথে মিশে যাবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে। সেখানে কোন জীব আত্মার উপস্থিতি থাকবে না। অর্থাৎ কবরে একটি নির্জীব অবস্থা, এখানে কোন আজাব বা শান্তি দেওয়া হয় না, বিধায় কবরে কোন আজাব নেই, এই মর্মে কোরানে কোন আয়াত আসে নাই। তবে পরবর্তী জনমে পূর্ব জনমের কর্ম অনুসারে শাস্তি বা আজাব দেওয়া হয়। যে কেহ হারাম ভক্ষণ করবে তাকে বানর বানানো হবে (২ঃ৬৫) (৭ঃ১৬৬)। যার উপর আল্লাহ লা'নত করবে এবং রাগান্বিত থাকবে তাকে বানর ও শুকর করবে (৫ঃ৬০)। অর্থাৎ ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়া পর্যন্ত এইভাবে জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে জন্ম জন্মান্তরে জীব আত্মা প্রবাহমান থাকবে, অতঃপর ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার মাধ্যমে সকল কিছু ধ্বসং হবে (২৮ঃ৮৮)। তখন সবাই নির্জীব কবরস্থ হবে (৮০ঃ২১)। এখানে কোন আজাব দেওয়া হবেনা। অতঃপর ২য় সিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে (৩৯ঃ৬৮)। অতঃপর পূর্বের দেহে আত্মা সংযোজন করা হবে (৮০ঃ২২) (৮১ঃ৭), অতঃপর তারা দন্ডায়মান হবে (৩৯ঃ৬৮)। অতঃপর কবর থেকে উঠে দৌড়াতে দৌড়াতে প্রভুর দিকে দৌড়াতে থাকবে (মাআরিজ-৪৩) (ইয়াসিন-৫১) পরে শেষ বিচারের মাধ্যমে দোযখ বা বেহেস্ত দেওয়া হবে (হুদ-১০৬)। (২) এখানে উল্লেখ্য যে, দুই বা একাধিকবার মৃত্যুর মাধ্যমে প্রভুর কাছে প্রত্যানীত হওয়ার ২য় যুক্তি হচ্ছে এই যে, সুরা আনামের ৩৬ নং আয়াতে বর্ণিত প্রভুর নিকট প্রত্যানিত হওয়ার সময় তাদের সম্মুখ থেকে সকল পর্দা উন্মোচন করা হবে এবং দৃষ্টি প্রখর করা হবে। (৫০ঃ২২)। তখন সকলেই অর্থাৎ কাফেররাও প্রভুকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে। (১৯ঃ৩৮)। পক্ষান্তরে শেষ বিচারের দিন কাফেররা সেদিন প্রভুর থেকে অন্তরিত থাকবে (৮৩ঃ১৫)। এবং অপরাধীরা সেদিন দৃষ্টিহীন অবস্থায় উৎথিত হবে। (২০ঃ১০২) এবং কাফেররা সেদিন অন্ধ অবস্থায় উঠিবে। (২০ঃ১২৪)। (৩) আবার ১ম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পুর্বে যারা মৃত্যুবরণ করবে তারা প্রভুর কাছে প্রত্যানিত করে ঈমান পরীক্ষা করতঃ প্রতিদান প্রদান করার লক্ষ্যে তাকে নতুন ভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে। (৩৪ঃ৭), (২১ঃ১০৪)। নতুন ভাবে সৃষ্টি করার কারণে পরবর্তী সৃষ্টি নতুন জনমে কেউ কাউকে চিনতে পারে না এবং ২য় সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর পূর্বের দেহেই আত্মা সংযোজ করা হচ্ছে। (৮১ঃ৭)। ফলে তারা সেদিন একে অপরকে চিনতে পারবে (১০ঃ৪৫)। (৪) আবার দেখা যাচ্ছে, ১ম সিংগায় ফুক দেওয়ার পূর্বে যে সকল মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তাদেরকে নতুন ভাবে সৃষ্টি করার সময় নতুন আকৃতিতে বা অন্য আকৃতিতে সৃষ্টি করা হচ্ছে। (ওয়াকিয়া-৬১)। তখন অপরাধীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বানর কিংবা পশু আকৃতিতে তৈরী করা হবে। (২ঃ৬৫) (৭ঃ১৬৬) (৫ঃ৬০)। পক্ষান্তরে ২য় সিংগায় ফুক দেওয়া পর অপরাধীদেরকে পৃথক করা হবে (৩৬ঃ৫৯) (১০ঃ২৮) এবং তাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে। (৬৯ঃ২৫)। (৫) আবার দেখা যাচ্ছে ১ম সিংগায় ফুক দেওয়ার পূর্বে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের ঈমান পরীক্ষা করার সময় সুপারিশকারী কেউ থাকছে না। কারণ ঐ সময় আল্লাহ ব্যতিত কোন সুপারিশকারী থাকবে না। (৩২ঃ৪)। পক্ষান্তরে ২য় সিংগায় ফুক দেওয়ার পরে যখন জীবিত হয়ে হাশর মাঠে উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবে সে সুপারিশ করিতে পারিবেন (১০ঃ৩)। (৬) প্রথম সিংঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার আগে মৃত্যুর পর যখন প্রভুর নিকট দন্ডায়মান হবে তখন প্রত্যকেই একাকি প্রভুর সামনে যাবে (১৯ঃ৯৫)। পক্ষান্তরে হাশরের মাঠে সকলেই একসাথে প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান হবে (১১ঃ১০৩)। (৭) প্রথম সিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পূর্বে যে সকল মৃত্যু হবে অতঃপর আল্লাহর কাছে ্উপস্থিত হয়ে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কথা বলতে পারবে এবং বলবে, হে প্রভু আমরা সব দেখলাম এবং শুনলাম এবং আমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দাও (সেজদা-১২) পক্ষান্তরে হাশরের মাঠে আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত কেহ কথা বলতে পারবে না (১১ঃ১০৫) (৭৭ঃ৩৫) (মুরছালাত-৩৫। (৮) ১ম সিংগায় ফুক দেওয়া পূর্বে যারা আল্লাহর পথে হিযরতে গিয়ে নিহত হয় তাদের উৎকৃষ্ট জীব্কিা দেয়া হবে এবং তাদেরকে এমন স্থানে দাখিল করা হবে যা তারা পছন্দ করিবে। (২২ঃ৫৮) (২২ঃ৫৯)। অর্থাৎ নতুন ভাবে সৃষ্টি করে তাদেরকে পছন্দের মত স্থানে রাখা হবে পক্ষান্তরে ২য় সিংগায় ফুক দেওয়ার মাধ্যমে জীবিত করে হাশরের বিচারের পরে তাদের দাখিল করা হবে জান্নাতে। (৯) আবার ১ম সিংগায় ফুক দেওয়া পূর্বে মৃত্যুর পর দেহটা কবরস্থ হচ্ছে আত্মাটাকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রভুর কাছে দন্ডায়মান করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আত্মা কবরস্থ দেহে সংযোজন করা হচ্ছেনা, কারণ ২৩ নং সূরার ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পরে সরাসরি পুনরুজ্জীবিত করে আত্মিক দেহে প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান করা হচ্ছে। (২৩ঃ১৬) (৬ঃ৩৬)। এই আয়াতে কিন্তু মৃৃত্যুর পর কবর কথা উল্লেখ নাই। পক্ষান্তরে ১ম সিংগায় ফুক দেওয়া পরে মৃত্যুর পর কবরস্থ থাকছে (৮০ঃ২১)। অতঃপর ২য় সিংগায় ফুক দেওয়া পর কবরস্থ দেহে আত্মা সংযোজন করা হচ্ছে (৮১ঃ৭)। এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রভুর সম্মুখে দুইবার বা একাধিক বার প্রত্যানিত হতে হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় ১ম সৃষ্টি থেকে ১ম সিংগায় ফুক দেওয়া পর্যন্ত এটা হচ্ছে জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে জন্মান্তরবাদ। অতএব জন্মান্তর বাদ কুরআনের মতবাদ।
.
Sourse

No comments:

Post a Comment